অতিথি প্রতিবেদক: দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ির নিকটবর্তী লালমাটিয়ার বধ্যভূমিটি এখনো অরক্ষিত। ঝোপ-জঙ্গল আর কচুরিপানায় ভরা জায়গাটি। সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের লালমাটিয়ায় রেললাইনের উভয় পাশে অবস্থিত বধ্যভূমিটি দেখে বুঝার উপায় নেই এখানেই রক্তের হোলিখেলায় মেতেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন অগণন শহিদ!
মাটি তুলে সড়কের পাশ কিংবা রেল লাইনের উভয় পাশে ভরাট করার কারণে অধিকাংশ জায়গায় জলাশয়। কিছু জায়গায় করা হচ্ছে চাষাবাদ। পাশেই আছে একটি ইটভাটা। ইটভাটার প্রবেশপথের পাশে একটি তালগাছ। এ তালগাছ থেকে সামনের দিকে এগোতে মূল সড়কের উভয় পাশ সহ নবনির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের আগ পর্যন্ত আনুমানিক ৩ শত হাত জায়গা জুড়ে ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকে গড়ে উঠেছিলো পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প। প্রথমে শিববাড়ি থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের দিকে এগোতে লালমাটিয়া নামক এ জায়গাটিতে সড়কের বাম পাশে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প থাকলেও পরে সড়কের ডান পাশে স্থানান্তর করা হয়।
বাঙালি স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রক্তের হোলিখেলা দেখলেও আজও এ জায়গাটি বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। স্বাধীনতার ৪৯ তম বছরে এসে সিলেটের সর্ববৃহৎ এ বধ্যভূমিটির কথা অনেকে ভুলেই গেছেন। কারো কারো মনে থাকলেও এটা এখন কেবল ইতিহাস। কোন দিবসেও প্রশাসনের গুরুত্ব পায় না বধ্যভূমিটি। নির্মম এ হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী উপজেলার গোটাটিকর ষাটঘর এলাকার মো. জামাল উদ্দিন। তিনি ১৬ ডিসেম্বর আসলেই বধ্যভূমিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
১৯৭১ সালে জামাল উদ্দিনের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। তার বর্ণনা মতে, পাকিস্তানি সৈন্যরা সাইরেন বাজিয়ে আসতো লাল রঙের একটি জিপ। তার পিছনেই আসতো কাঠের তৈরি একটি বাসগাড়ি। গাড়ি ভর্তি বাঙালীদের ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হতো। অতঃপর লাল জিপে বসা কর্নেলের নির্দেশ পেলেই গুলি করে হত্যা করা হতো। দেশ স্বাধীনের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তিনি।
তখনকার ১২ বছরের সেই জামাল উদ্দিনের বয়স এখন ৬০ বছর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এমন ভয়াবহ অহরহ ঘটনার সাক্ষী সিলেট শহরতলির দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ির পার্শ্ববর্তী লালমাটিয়া এলাকা।
সে সময় প্রতিদিন অগণিত বাঙালির রক্তে এ জায়গাটি ভেজা থাকলেও এখন কেবল কচুরিপানা আর ঝোপ-জঙ্গল। নেই কোন স্মৃতিচিহ্ন। স্বাধীনতার ৪৯ তম বছরে এসে এখন একটাই প্রশ্ন আর কত বছর গেলে পরে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এ স্থানটি?
অনেক আগে জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে এটি আলোর মুখ দেখেনি।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু চৌধুরী জানান, ৩-৪ মাস আগে বধ্যভূমি এলাকা ডিজিটাল সার্ভে করে জেলা প্রশাসন অফিসে পাঠানো হয়েছে। বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ চলছে।